ডায়াবেটিস কি? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডায়াবেটিসের আমাদের মানব স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞান দের দেখা যায় প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের দেহে কিছু না কিছু রোগ থাকে।তবে আজকালকার দিনে মানুষের জনজীবনের যে রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেটি হল ডায়াবেটিস।প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়।
পেজ সুছিপত্রঃ ডায়াবেটিস কি? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডায়াবেটিস কি?এর সম্পূর্ণ তথ্য
ডায়াবেটিস হল শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দক্ষতার সঙ্গে (কার্যকরভাবে) ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।
ইনসুলিন মানুষের শরীরের কোষগুলিতে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ একটি "চাবি" হিসাবে কাজ করে। এর দ্বারা আমাদের খাবার থেকে যে চিনি বা শর্করা (গ্লুকোজ) পাওয়া যায়, তা রক্তের মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়ে কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। তারপর,কোষ শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে। ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্নাশয় এর বিশেষ কোষ দ্বারা তৈরি হরমোন আয়লেটস ঠিক থাকে ডায়াবেটিস- জনিত ইনসুলিনের তারতম্যর জন্য আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রায় তারতম ঘটে। শরীরে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
- সাধারণত HbA1c লেভেল কি
যাদের ডায়বেটিস নেই তাদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন A1c স্তরের স্বাভাবিক পরিসীমা 4%থেকে 5.6% এর মধ্যে থাকে।হিমোগ্লোবিন A1c মাত্রা 5.7% এবং 6.4% এর মধ্যে মানে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 6.5% বা তার বেশি মাত্রা মানে আপনার ডায়াবেটিস আছে।
ডায়াবেটিসের কারণ
- যেকোনো বয়সে টাইপ টু ডায়াবেটিস হতে পারে তবে শিশু বা তরুণদের তুলনায় মধ্যবয়সী এবং তুলনামূলক বয়স্করা এ রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
- অন্য যে বিষয়গুলোর মধ্যে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
- নিকট জনের কারোটাই একটু ডায়াবেটিস বা ইনসুলিনস রেজিস্ট্যান্স থাকলে
- প্রি ডায়াবেটিস অর্থাৎ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিন্তু ডায়াবেটিসের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকলে
- অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে
- শারীরিক পরিশ্রম কম করলে
- পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে
- তামাকজাদ দ্রব্য গ্রহণ করলে
- খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত চিনি এবং কম ফাইবার যুক্ত খাবার থাকলে
- অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে
ডায়াবেটিস হওয়ায় কাদের ঝুঁকি বেশি থাকে
- বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যাদের বাবা মা ভাই বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
- এছাড়াও যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করে না অলস বা অনিয়ন্ত্রণ জীবন যাপন করে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- এছাড়াও নারীদের গর্ভ ব্যবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।
- যাদের হৃদরোগ রয়েছে রক্তে কোলেস্টেরল বেশি উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদেরও এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
- যেসব শিশুর ওজন বেশি যাদের বাবা-মা ভাই-বোন দাদা-দাদী নানা-নানি বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল সেইসব শিশুর ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছ।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
টাইপ 1 ডায়াবেটিসের লক্ষণ-এর সূত্রপাত কর দ্রুত ঘটে এবং নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি হঠাৎ দেখা দিতে পারে:
- তীব্র তৃষ্ণা
- অতিরিক্ত প্রসাবের প্রবণতা
- দ্রুত ওজন হার্স
- প্রচন্ড ক্ষুধা
- দুর্বলতা বা ক্লান্তি
- অস্বা ভাবিক বিরক্তি
- ঝাপসা দৃষ্টি
- বমি বমি ভাব
- পেটে ব্যথা
- অপ্রীতিকর গন্ধের অনুভূতি
- চুলকানি
- >টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ রূপটি কে টাইপ 2 ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন- অনির্ভর ডায়াবেটিস বলা হয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৯০% লোকের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে টাইপ দুধ প্রাপ্তবয়স্ক সূচক(adult-onset) ডায়াবেটিস ও বলা হয় কারণ সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পরে প্রকাশ পায়। তবে ইদানিং ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অল্পবয়স্ক মানুষদের হচ্ছে।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজস্ব ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম।কিন্তু প্রায়শই এটি পরিমাণে যথেষ্ট নয় মডুঃ বা কোষ যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া করে ন। অর্থাৎ ইনসুলিন শরীরের কোষগুলিকে খেলার জন্য চর্বি হিসেবে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে ন। ফলে শর্করা কোষের প্রবেশ করতে পারে না। একে বলা হয় ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স।
ডায়াবেটিসের এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে
- ধীরগতিতে ক্ষতস্থান নিরাময়
- তীব্র তৃষ্ণা
- অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা
- দ্রুত হারে ওজন হ্রাস
- অপ্রীতি কর গন্ধের অনুভূতি
- হাতে এবং পায়ে ঝিনঝিন
- চুলকানি
- মূত্রনালীতে সংক্রমণ
- ঝাপসা দৃষ্টি
- মেজাজ পরিবর্তন
- মাথা ব্যাথা
- মাথা ঘোরা
- বগল এবং ঘাড়ের কাছে কালচে ছাপ
আরো পড়ুনঃ
সজনে পাতার উপকারিতা কিডায়াবেটিসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডায়াবেটিস ইনসুলিন ইঞ্জেকশন গ্রহণ করা বা ইনসুলিন পাম্প অন্য ডিভাইস ব্যবহার করা চিকিৎসা করা হয়।বাহির থেকে প্রয়োগ করা ইনসুলিন কোষ শর্করা যাতায়াতের চর্বি হিসেবে কাজ করে। শরীরের কোষগুলিতে গ্লুকোজ প্রবেশ করে। অবশ্যই ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো কতটা ইনসুলিন নিতে হবে তা সঠিকভাবে জানা কঠিন। এর পরিমাপ অনেক কারণে উপরে নির্ভর করে
- খাদ্য ভাস
- ব্যায়াম
- মানসিক চাপ
- আবেগ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য
ইনসুলিনের কি ডোজ গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করা একটি জটিল কাজ। যদি কেউ অত্যাধুনিক ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাহলে তার রক্তের শর্করার মাত্রা বিপদজনকভাবে নিম্নস্তরে নেমে যেতে পারে।এটিকে হাই হাইপো-গ্লাইসেমিয়া বলা হয়।এতে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
একইভাবে যদি প্রয়োজনের থেকে খুব কম পরিমাণে ইনসুলিন গ্রহণ করা হয় তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বিপদজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে কিন্তু কোষগুলিতে শর্করার অভাব দেখা দেয় একে হাইপো গ্লাইসোমিয়া বলা হয়
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
এ ধরনের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য শরীর দ্বারা উৎপাদিত ইনসুলিনকে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে বের করা জড়িত। তাই বলা যায় ডায়েট ও ব্যায়াম এবং ওজন কমানোর উপর জোর দেন। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস হলে কি কি খাবেন ন।
- ডায়াবেটিসে কখনো শরীরের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া চলে না।
- যেসব খাদ্য বা পানীয় শর্করা পরিমাণ বেশি থাকে সেসব বরগুন করতে হবে
- কাঁচা লবণ খাওয়া এড়াতে হবে ।
- বেশি ভাজা ও তেল যুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
- অতিরিক্ত সাহাবা কফি পান করা যাবে না।
- ফ্যাট যুক্ত দুধ বা দুধজাত খাবার বদন করতে হ...।
- ভাত আলু কলা এবং গাজরে শরকরা বেশি থাকে সুতরাং এই খাবারগুলি খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সুগার এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য কি
- ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হলো আমাদের রক্তে অবস্থিত শর্করা বা চিনি। এই শর্করা আমাদের খাবার থেকে আসে এবং এটি শরীরের শক্তি প্রধান উৎস।শরীরের শক্তি চাহিদা পূরণের জন্য রক্ত শরীরের প্রত্যেকটি কোষ ও গ্লুকোজ বহন করে। ডায়াবেটিস হলো এমন একটি রোগ যেখানে রক্তে এই শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে না।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা
ডায়াবেটিসের কারণে ধীরে ধীরে দেহের বিভিন্ন রকমের জটিলতা দেখা দেয়,যত দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনিয়মিত থাকে জটিলতা তত বাড়তে থাকে। যা কখনো কখনো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তার মধ্যে হৃদরোগ স্নায়ুরোগ,কিডনিজনিত সমস্যা বা কিডনি ফেইলিওর চোখের রেটিনা ক্ষতি কষ্ট হওয়ায় এবং তা থেকে অন্ধত্ব ইত্যাদি সমস্যা অন্যতম।এছাড়াও ডায়াবেটিস ফুট বা পায়ের আনসার ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরেক আতঙ্ক এর ফলে অনেক সমসাময় রোগীর পাও কেটে ফেলতে হতে পারে।চর্ম রোগের শ্রবণজনিত সমস্যা বিষন্নতা ইত্যাদি ও হতে পারে।রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হট করে কমে গেলেও বিপদ হতে পারে।অতিরিক্ত ঘাম মাথা ঘোরা চোখের গলাটা বৃষ্টি খিচুনি এমনকি এ থেকে অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে যদি সঠিক সময়ের মধ্যে তা ঠিক না করা হয়।
ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদ এর গুরুত্ব জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে যেমন
- হৃদরোগ এবং স্টক
- স্নায়ুর ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি )
- কিডনির ক্ষতি (নেপ্রোপ্যাথি )
- চোখের ক্ষতি (রেটিনোপ্যাথি )
- পায়ের ক্ষতি এবং সংক্রমণ
- ত্বক এবং মুখের সমস্যা
- শ্রাবণ শক্তি হ্রাস
- আলঝাইমার রোগ
- বিষণ্নতা।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জটিলতা
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের অচিকিৎসিত অবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি এবং রক্তের শর্করা মাত্রা কমে যাওয়ার টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।মায়ের ক্ষেত্রেও প্রিক্ল্যাম্পিসিয়া বা পরবর্তী গর্ভধারণের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
শেষ কথা
ডায়াবেটিস একটি জটিল অবস্থা যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।অবগত থাকা এবং ডাক্তারদের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং জটিলতা প্রতিরোধের চাবিকাঠি। নিয়মিত চেকআপ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস গ্রহণ এবং নির্ধারিত চিকিৎসা অনুসরণ করা ডায়াবেটিস রোগীদের পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতে সহায়তা করতে পারে।গবেষণায় অগ্রগতি অব্যাহত থাকায় নতুন চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনায় কোলাকৌশল গুলি এই দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা দ্বারা প্রভাবিতদের জন্য উন্নত ফলাফল এবং জীবনের মানে জন্য আশা প্রদান করে
এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন আশা করি। তবে ডায়াবেটিস একবারে নির্মূল করা যাবে না। উপরে এগুলো নিয়মে জীবন পরিচালনায় আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।ধন্যবাদ।
পপুলার ড্রিম আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url