জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় কি?
জন্ডিস খুব সাধারন রোগ মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু সব সময় সাধারণ থাকে না, মারাত্মক ঝুঁকির কারনও হয়ে ওঠে।রক্তে বিলি রুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। চোখ ত্বক ও মুখের ভেতর হলদেটে ভাব ফুটে ওঠে। এমন পরিস্থিতিকে সাধারণত জন্ডিস বলা হয়ে থাকে।
জন্ডিসের পাশাপাশি অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, জ্বর জ্বর ভাব, বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথার মতো উপসর্গ, দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। যাতে করে চিকিৎসক রোগীর শারীরিক লক্ষণ, রক্তনালীর পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন।
পেজ সূচিপত্র ঃ জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় কি?
- জন্ডিস কেন হয়
- জন্ডিসের কারণগুলোকে কয়েক ভাবে ভাগ করা যায়
- জন্ডিসের লক্ষণ
- জন্ডিস হলে কি করবেন
- জন্ডিস প্রতিরোধ করনীয়
- জন্ডিসে যা করতে মানা
- কখন হাসপাতালে যাওয়া উচিত
জন্ডিস কেন হয়
- মূলত তিনটি কারণের জন্ডিস দেখা দেয়
- হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ।
- পিত্তনালির ব্লক বা পিত্তরসের পথে বাঁধা।
- হিমলাইসিস বা সময়ের আগে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার ভেঙে যাওয়া।
- হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ নানারকম ভাইরাস। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই ভাইরাসের নাম আমরা কমবেশি জানি। হেপাটাইটিস এ এবং ই দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বি এবং সি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে আর অনিরাপদ যৌনসংসর্গের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাস গুলো ছাড়াও বিপাকজনিত কিছু সমস্যায় অ্যালকোহল সেবন বা অটোইমিউন কিছু রোগে যকৃতের প্রদাহ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জন্ডিসের কারণগুলোকে কয়েক ভাবে ভাগ করা যায়
- ভাইরাসের সংক্রমণ
- থ্যালাসেমিয়া
- হিমোলাইটিক এনিমিয়া
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লিভার সিরোসিস
- লিভার /প্যানক্রিয়াস /পিত্তনালীর ক্যান্সার
- কিছু বিরল জেনেটিক রোগ ( উইলসন ডিজিস) বা অটোইমিউন ডিজিস।
জন্ডিসের লক্ষণ
- জন্ডিস হলে চোখ, প্রস্রাব ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- ভাইরাল হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাদ্য গ্রহণের অরুচি ও বমি বমি ভাব আসে।
- অনেক সময় বমিও হতে পারে।
- শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা থাকে।
- জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব।
- পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- শরীরে চুলকানি ও ফ্যাকাশে বা সাদাটে পায়খানা হতে পারে।
- কোন কোন ক্ষেত্রে রক্ত বমি হতে পারে
- আলকাতরার মতো কালো পায়খানা হতে পারে।
- পেট ও পায়ে পানি এসে ফুলে যেতে পারে।
- পেটে চাকা বা লাম্প অনুভূতি হতে পারে।
জন্ডিস হলে কি করবেন
- পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম না নিলে বিপাক বাড়বে, যকৃতের ওপর চাপ বাড়বে, বিলিরুবিন আরও বাড়বে। প্রয়োজনে মাত্রা বেশি হলে সহ্যশায়ী অবস্থায় থাকুন।
- অস্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করুন। খাবার নিয়ে অতিরিক্ত বিধি-নিষেধের দরকার নেই। পুষ্টিকর রুচিকর স্বাস্থ্যকর যেকোন খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।
- স্বাভাবিক মাত্রায় পানি পান করুন। অতিরিক্ত পানি পান আখের রস, নানা রকমের জুস, জন্ডিসের উপকার আনে বলে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
- প্রতিদিন গোসল করুন পরিচ্ছন্ন থাকুন।
- জন্ডিস হলে যকৃতের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় যেকোনো ধরনের ঔষধ গ্রহণ না করাই উত্তম। পেটব্যথা বা বমির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে পারেন। যারা আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান, তারা চালিয়ে যাবেন ডায়াবেটিসের ওষুধ বন্ধ করে এ সময় ইনসুলিন নেওয়া ভালো।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
জন্ডিস প্রতিরোধ করনীয়
সাধারণত নির্ভুল চিকিৎসা করে ঠিক কি কারণে জন্ডিস হল তার ওপরে। আমাদের জন্ডিস থেকে বাঁচতে হলে কিছু করণীয় আছে।তাই জন্ডিস প্রতিরোধক সম্পর্কে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার।
হেপাটাইটিস এ ও ই খাদ্য পানির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আর বি সি ও ডি দূষিত রক্তের, সিরিন্স এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে তার মাধ্যমে বিস্তৃত হতে পারে। এজন্য আমাদের সব সময় বিশুদ্ধ পানি ও পান করতে হবে। শরীরের রক্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্কিন করে নিতে হবে যাতে করে কোন রক্তের দূষিত কিছু আছে কিনা তাই জানার জন্য।
- নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
- কলকারখানা রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।
- সকল ধরনের ব্যবহারকৃত ইনজেকশন কিংবা নাক কান ফোঁড়ানোর ব্যবহার করা যাবে না।
- যারা সেলুনে সেভ করেন তাদেরও খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহারকৃত ব্লেড বা খুব অবশ্যই পরিষ্কার আছে কিনা।
- নিরাপদ যৌন মিলন করুন।
- হেপাটাইটিস এ ও বি হওয়ার আকাঙ্ক্ষার থেকে মুক্তি থাকতে হলে হেপাটাইটিস এ ও বি এর ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।কেননা বিশ্রাম না নিলে যকৃতের ওপর চাপ পড়বে। বিলিরুবিন এগুলো আরো বাড়াতে হবে।
- স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার গ্রহণ করুন। খাবার নিয়ে অতিরিক্ত বিধি নিষেধনা থাকা দরকার নেই। পুষ্টিকর ও রুচি কর স্বাস্থ্যকর যেকোনো খাবার আপনি গ্রহণ করতে পারবেন।
- স্বাভাবিকভাবেই পানি মাত্রায় পান করুন। অতিরিক্ত পানি পান ও আখের রস নানান রকমের জুস জন্ডিসের উপকার আনে এ ধরনে বিজ্ঞানী ভিত্তি নেই।
- জন্ডিস হলে প্রতিদিন গোসল করুন। পরিষ্কার থাকুন। জন্ডিসের কারণে যকৃতের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- এমন সময় যে কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ না করাই উত্তম। এমন সময় যেকোনো রোগের আবির্ভাব দেখা দিলে সেগুলো ওষুধ সেবন করতে পারেন।
জন্ডিসে যা করতে মানা
জন্ডিসের আক্রান্ত হলে কোনরকম কবিরাজ ও গাছের লতাপাতা রস এগুলো খাওয়া যাবেনা। এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে যেকোনো জিনিসই শরীরে প্রবেশ করার পরে যকৃতে বিপাক হয়।
জন্ডিসের আক্রান্ত হলে লিভার টনিক বা সালসা সিরাপ বা পানি পড়া জন্ডিসের সারানো তরল হিসেবে যা বিক্রি করা হয় তা জন্ডিসের কোনই কাজে আসে না।
আবার অনেক সময় মনে করেন জন্ডিস হলে হলুদ বা মসলা খাওয়া যাবেনা। এগুলো ধারণার একেবারেই ঠিক না। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর খাবারের রুচি বাড়ানোর জন্য সাধারণত যতটুকু মসলা ব্যবহার করা হয় তা করেন।
অনেকেই দেখা যায় জন্ডিস হলে সব খাবার বাদ দিয়ে কেবলমাত্র তরল আখের রস চিনির শরবত ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। মাছ মাংস আমি জাতীয় গহন থেকে বিরত থাকেন। এতে করে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বাড়ে। তাই শর্করা খেলেই হবে না এবং সুষম খাবারও পর্যন্ত গ্রহণ করতে হবে।
জন্ডিস হলেই যে দিনে কয়েকবার গোসল করতে হবে শরীরের হলুদ বেরিয়ে যাবে বলে আমরা মনে ধারণা করে থাকি এর কোন ভিত্তি নেই। গোসলের ফলে শরীরে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
কখন হাসপাতালে যাওয়া উচিত
একজন জন্ডিস রোগীর পর্যন্ত পরিমাণ বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে জন্ডিসের রোগী সেরে যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটা কম বেশি সময় লাগতে পারে। জটিলতা দেখা দিলে কখন হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। যদি দেখা যায় রোগীর বিলিরুবিনের মাত্রা অত্যাধুনিক বেড়ে যায়। এবং মুখে কিছুই খেতে পারে না অতিরিক্ত বমি বমি ভাব দেখা দেয় এমন অবস্থা হলে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
পপুলার ড্রিম আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url